পরিবেশ রক্ষার ১০টি উপায়!

পরিবেশ দূষণ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনায় এসেছে। পরিবেশ দূষণের ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন এর ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের। তাই এই পৃথিবী এবং পৃথিবীর সকল প্রাণীদের বাঁচাতে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের গভীর মনযোগ দেয়ার সময় এসে পড়েছে।
তাই পরিবেশ রক্ষায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে।
১। ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলাঃ আমাদের বাসাবাড়ি, অফিস, ক্লাসরুম অথবা কলকারখানার বর্জ্যসমূহ আমরা যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলব। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট যায়গায় যায়গায় আবর্জনা ফেলার ‘বিন’ রাখতে পারি। এতে করে বর্জ্য এদিক সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে না বরং এক যায়গায় থাকবে।
২। যেখানে সেখানে থুথু না ফেলাঃ
প্রায়শই দেখা যায় রাস্তাঘাটে এদিকে সেদিকে অনেকেই থুথু ফেলে। যেটি একটি বদভ্যাসও বটে। তবে পরিবেশ রক্ষায় এটি পরিহার করা গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে সেখানে থুথু ফেলার কারণে পরিবেশ নোংরা হয়। যার ফলে পরিবেশ দূষিত হয়।
৩। প্লাস্টিক ব্যবহার পরিহার করাঃ
পরিবেশ দূষণের জন্য অন্যতম দায়ী বস্তুটি হলো প্লাস্টিক। প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি বয়ে আনে। প্লাস্টিক এমন একটি জিনিস যাকে বলা হয় ‘অপচ্য পদার্থ’ কারন এটি প্রকৃতিতে পঁচতে অনেক বেশি সময় নেয়। এর ফলে উদ্ভিদসহ বিভিন্ন প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেকাংশে হ্রাস করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটজাত দ্রব্য ব্যবহার করে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারি।
৪। কাগজের অতিরিক্ত ব্যবহার হ্রাস করাঃ
কাগজ তৈরীর উপাদানসমূহের মাঝে রয়েছে কাঠ ও বাঁশ। তাই বলা যায়, কাগজ তৈরীতে প্রতিনিয়ত কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালা। গাছ লাগানোর পরিবর্তে ক্রমাগত গাছপালা উচ্ছেদের কারনের প্রকৃতিতে অক্সিজেনের পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশের এই বিপর্যয় রোধে আমাদের উচিত প্রয়োজন এর অতিরিক্ত কাগজ ব্যবহার না করা৷ এতে গাছপালা উচ্ছেদের পরিমান হ্রাস পাবে, রোধ হবে পরিবেশ দূষণ।
৫। পণ্যকে পুনঃব্যবহার উপযোগী করে তোলাঃ “রিসাইকেল” বা পণ্যকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলার মাধ্যমে পরিবেশকে রক্ষা করা যেতে পারে। প্লাস্টিক সহ আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র ব্যবহার এর পর ফেলে না দিয়ে রিসাইকেল করার মাধ্যমে পরিবেশের উপর চাপ কমাতে পারি। পণ্যকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করার মাধ্যম একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা পাবে, অন্যদিকে অতিরিক্ত খরচ ব্যতীত আমরা দৈনন্দিন জিনিসপত্র ব্যবহার করতে সক্ষম হবো।
৬। যানবাহন নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন করাঃ যানবাহন এর যন্ত্রাংশ নির্দিষ্ট সময় পর পর যথাযথভাবে রক্ষনাবেক্ষন না করলে কালো ধোঁয়া নির্গমনের মাধ্যমে এটি পরিবেশ দূষণ করে। যানবাহন এর কালো ধোঁয়া মারাত্মকভাবে বায়ু দূষণ করে যার ফলে পরিবেশে নির্মল বায়ুতে নিশ্বাস নেয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। যানবাহন এর কালো ধোঁয়া মিশ্রিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার ফলে ফুসফুসের সমস্যা সহ আমাদের নানান শারীরিক ব্যাধি হতে পারে যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিবেশ রক্ষায় সময়মতো যানবাহন রক্ষনাবেক্ষন করা আমাদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।
৭। ফসল চাষে কীটনাশকের ব্যবহারকে ‘না’ বলাঃ বর্তমান যুগে প্রায়শই শস্যক্ষেতে কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ লক্ষণীয় যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। শস্যক্ষেতে ব্যবহৃত কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীতে মিশে যায় যা মাছের মৃত্যুর কারণ হয়। তাই পরিবেশ রক্ষায় আমাদের উচিত কীটনাশককে ‘না’ বলা এবং জৈবসার ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।
৮। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেও আমরা পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারি। লক্ষনীয় যে, মাংসের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বনভূমি ধ্বংস করে বিভিন্ন যায়গায় খামার গড়ে তোলা হচ্ছে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে যেখানে আমাদের বেঁচে থাকতে অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ। তাই, প্রাণীজ খাদ্যের তুলনায় উদ্ভিজ্জ খাদ্যকে আমাদের বেশি প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন।
৯। সচেতন হোন,সচেতন করুনঃ
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবেশ রক্ষায় নিজেকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি আশেপাশের মানুষকেও সচেতন করতে হবে। কারণ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ব্যাতিত পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব।
১০। বৃক্ষরোপণ করাঃ
গাছ লাগান, গাছ লাগান এবং গাছ লাগান। পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। বনভূমি ধ্বংস না করে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এতে প্রকৃতি যেমন সুস্থ থাকবে,তেমনি আমরাও সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশে জীবনযাপনে সক্ষম হবে।
More From Author
- None Found