রহস্যের নির্মমতা

১৬নভেম্বর,২০১৬।বুধবার।
নিখিলের মনটা আজ খুব একটা ভালো নেই।ক্যাডেট কলেজে সেভেনে পড়ে নিখিল। তার বয়সের ছেলেরা যখন ঘুমাচ্ছে সে তখন ভোড়ে উঠে পেরেড করছে।তার উপর আজ ফাহিয়ান ভাইও (সহকারী হাউজ লিডার) কোন কারণে আজকে অনেক রেগে আছে।আর রাগের ফল ভোগ করছে নিখিল আর তার ক্লাসমেটরা।আজকে অনেক ধকল গিয়েছে সবার উপর।এসব ভাবতে ভাবতে মন খারাপ করে ক্লাসে যায় নিখিল।কারো সাথে কথা বলে না।
ক্লাসে যাওয়ার সাথে সাথে একটা খবর শুনে নিখিলের আর মন খারাপ থাকে না।বরং তার মনে এখন খুশি আর ধরে না।এই মাত্র পিওন এসে বলে গেল যে নিখিল আজ বাড়ি যাচ্ছে ছুটিতে।কোন কিছু না ভাবেই নিখিল সাথে সাথে তার রুমে চলে যায় এবং নতুন কাপড় পড়ে চলে আসে প্রসাশনিক ভবনে। মনে মনে ভাবে বাবাকে সে হঠাৎ পিছন থেকে ডেকে চমকে দিবে।গিয়ে দেখে শাহেদ মামা প্রিন্সিপ্যাল স্যারের সাথে কথা বলছে।শাহেদ মামা হলো নিখিলের মামার বন্ধু।
বাইরে আসার পরই নিখিল জিজ্ঞেস করে “ শাহেদ মামা,আব্বু কোথায়?”
“তোমার দাদু অসুস্থ তো,তাই তোমার আব্বু আসতে পারেনি”
নিখিলের মনটা খারাপ হয়ে যায়।গাড়িতে যেতে যেতে সে বুঝতে পারে দাদু মনে হয় মারা গিয়েছে।কারণ দাদু অনেকদিন ধরেই অসুস্থ।তাই,দাদু মারা না গেলে আব্বু নিশ্চয়ই আসত। সে ভাবতে থাকে কীভাবে বাবাকে সে শান্তনা দিবে।সে তো নিজে জানেই না প্রিয়জন চলে গেলে কেমন অনুভব হয়।এসব ভাবতে ভাবতে সে একসময় সে দেখে তাদের গাড়ি বাসার কাছের ইদগাহের কাছে চলে এসেছে।সে বুঝতে পারে তার ধারনাই ঠিক।দাদু মারা গেছে।
সামনে মামাকে এগিয়ে আসতে দেখে সে জিজ্ঞেস করে, “মামা,আব্বু কোথায়? আব্বু নিশ্চয় দাদুর জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে,কান্না করছে।আমাকে আব্বুর কাছে নিয়ে যাও”
“ তোমার আব্বু আর নেই নিখিল।তোমার আব্বু মারা গেছেন”
মামার কথা বিশ্বাস হয় না নিখিলের।সে দৌড়ে মাঠের সামনে জানাযার জন্যে রাখা লাশের কাছে যায়। মুখ খুলে দেখে সে হাটুর উপর পরে যায়, নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারে না।তার আব্বু তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না।জানাযার জন্য আসা সব লোক তাকে সান্তনা দিতে এগিয়ে যায়।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার মানুষকে সে দেখতে পায় না।তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে দিগন্তকে ছুঁয়ে দেয়া এক রাস্তা। রাস্তার শেষ প্রান্তে সে তার বাবাকে দিগন্তের সাথে মিশে যেতে দেখে। সেই রাস্তা ধরে সে দৌড়াতে থাকে আর চিৎকার করে ডাকে, “বাবা তুমি যেও না।তুমি ফিরে আস”। সে জানে দিগন্তকে যেমন ধরা যায় না, বাবাকেও হয়তো সে আর ধরতে পারবে না। তবুও সে দৌড়াতে থাকে আর চিৎকার করতে থাকে। হয়তো বাবা ফিরে আসবে।
হঠাৎ সে একটা গলার আওয়াজ পায়।বাবা তাকে ডাকছে, “ নিখিল,তুই এমন কেন করছিস রে পাগল ছেলে? তোকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারি। আমি তো সবসময় তোর মাঝেই আছি”।
More From Author
- None Found
My thoughts about life is much different. I don’t need qoutes or your affection to live. I just need you to believe and inspire me to live perfectly.