ZERIN A LIE DETECTOR

আপনাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন যিনি কখনো
মিথ্যা বলেন নি? খুব কম মানুষের উত্তর হ্যাঁ হবে অথবা এমন কোন মানুষ পাওয়া দুষ্কর হতে পারে।
আজকের গল্পটা জেরিনের। ছোটবেলা থেকেই সে একটু সহজ সরল প্রকৃতির। সে যেকোন মানুষকে অল্প কথায় এবং অল্প দিনের পরিচয়ে বিশ্বাস করে ফেলে। মিথ্যা বলা জেরিনের একেবারেই অপছন্দ। সে মিথ্যুক মানুষকে একেবারে ঘৃণার চোখে দেখে।
একদিন তার কলেজের বন্ধু বান্না তাকে দুষ্টামি করে বলেছে জানিস কলেজের বড় ভাই রকি তোকে পছন্দ করে। জেরিন জিজ্ঞেস করে তুই কিভাবে জানিস? বান্না বলে রকি ভাই আমাকে বলেছে ব্যাপারটা।
এই কথা শুনে জেরিনের মনে এক ধরনের সন্দেহপ্রবনতার সঞ্চার হচ্ছিল। কৌতুহল থেকে ম্যাসেঞ্জারে জেরিন রকি ভাইকে ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট দিল।
জিজ্ঞেস করলো আপনি ফ্রি আছেন? আপনার সাথে কিছু কথা আছে। রকি ভাই বললো জ্বি বলুন। আপনি নাকি আমায় পছন্দ করেন? রকি ভাই জিজ্ঞেস করে কে বললো? জেরিন উত্তরে বলে আমার বন্ধু বান্না। রকি ভাই বলে কই আমিতো এইরকম কিছু বলি নি।
জেরিনের মনে বান্নার জন্য ভীষণ রাগ এবং অভিমান জমতে থাকলো। পরে সে বান্নার আরেক বন্ধু থেকে জানতে পারলো সে প্রায় এই ধরনের মিথ্যা কলা বলে থাকে।
এক্ষেত্রে হুমায়ুন আহমেদের
একটা উক্তি মনে পড়ে যায়-
“সত্য কথাগুলো সব সময় বক্তৃতার মতো শোনায়, মিথ্যাগুলো শোনায় কবিতার মত”
সে বান্নার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল এবং সব সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে তাকে ব্লক করে দিল। পরে
বান্না অনেক অনুনয় বিনয় করেছিল কিন্তু, তাতেও জেরিনের মন ভিজেনি এবং তাকে আজো ক্ষমা করতে পারেনি।
এই গল্প থেকে কি শিখলেন? মিথ্যা আসলে মহাপাপ। অনেক সময় ছোট একটা মিথ্যাও বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
জেরিনের ছোট বেলার বন্ধু তারিন। নামের মিল থাকলেও দুজনের স্বভাব দু’ধরনের। তারিন একটু দুরন্তপনা স্বভাবের সহজ বাংলায় যাকে বলে চালু। যার তার সাথে বন্ধুত্ব করা এবং কাউকে সহজে বিশ্বাস করে নেয়ার মত পাত্রী সে নয়।
জেরিন বান্নার বিষয়টা তারিনের নিকট শেয়ার করলো। জবাবে তারিন বললো তুই কি জানিস তুই একটা গাধী এবং বোঁকা? কেউ কিছু বললে অমনি সেটা বিশ্বাস করে ফেলবি?
জেরিন বলে তাহলে কি করবো? উত্তরে তারিন বললো মানুষের কথা-বার্তা খেয়াল করবি, যাচাই করবি, প্রশ্ন করবি কি, কখন, কেন, কোথায় ইত্যাদি।
তারিন সম্প্রতি একটা ট্রেনিং নিচ্ছে যার নাম YPS (Young Professional Smartification)। সে জেরিনকে বললো জানিস আজকের ট্রেনিং এ How to spot lies একটা সেশন আছে, তোর জন্য ভালো হবে অনেক। করতে পারিস মিথ্যাবাদীকে চিনতে পারবি।
জেরিন রাজী হয়ে গেল ট্রেনিংয়ের জন্য এবং সেশন থেকে সে জানতে পারলো তা হলো-
- Learning From How to spot lies session:
১. মিথ্যা ধরার ১০০% কোন কৌশল নাই, এটা নিয়মিত শেখা এবং চর্চার একটি বিষয়। এক্ষেত্রে নিজেকে আরকটু স্মার্ট করতে হবে এবং মনযোগী হতে হবে
২. মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে গভীর ভাবে। এক্ষেত্রে কথা বলা, বসা, স্মাইল, মুখের অবয়ব থেকে শুরু করে প্রত্যেক জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
৩. কথা বের করার আগে খাতির জমাতে হবে যেমনঃ কথা বের করার জন্য পুলিশ প্রথমে ভালো ব্যবহার করে এবং বলে সত্য স্বীকার করলে আমরা আপনার সাজা কমিয়ে দিবো।
৪. কেউ কোন কাজে হ্যাঁ বললো তার মানে এই না যে কাজটা হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ফলো-আপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যেমনঃ রহিম করিমের নিকট থেকে একটা লিংকডিন রিকমেন্ডেশন চাইলো। রহিমের দায়িত্ব করিম কাজটা করছে কিনা সেটা দেখা।
৫. শুনতে হবে বেশি, বলতে হবে কম। একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন মহান আল্লাহ আমাদের কান দিয়েছেন দুটি কিন্তু, মুখ একটি। তার মানে বলার চাইতেও শোনা উত্তম।
৬. মিথ্যুক একাধিক মানুষ হলে সেক্ষেত্রে ওয়ান টু ওয়ান ডিস্কাশন কার্যকরী।
৭. প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হবে ঘুরিয়ে, পেচিয়ে।
যেমনঃ ঘটনার পেছনের ইতিহাস জিজ্ঞেস করা।
৮. মুভি সাজেশনঃ লায়ার, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান।
এই লেসন জেরিন নিয়মিত চর্চা করতে থাকলো।
এখন সে কেউ মিথ্যা কথা বললে একটা হাসি দেয় এবং তা ধরে ফেলতে পারে।
আপনি কেন বসে থাকবেন! চলুন, আজকে এখন থেকে লেসন গুলো চর্চা করতে থাকুন।
মনযোগ এবং সময় দিয়ে পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ❤