15 ই আগস্ট-SAIKAT BISWAS-3rd-Bangla Story

সকাল সকাল উঠে স্নান খাওয়া-দাওয়া করে রনি বেরিয়ে পড়ল স্কুলের উদ্দেশ্যে। আজ 15 ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্কুলের আয়োজিত অনুষ্ঠান দেখতে যাবে সে এবং অংশগ্রহণ করবে। স্কুলে ঢুকে সে দেখতে পেল কয়েকজন শিক্ষক আর ছাত্র একসাথে জাতীয় পতাকা লাগাচ্ছেন। সেও গিয়ে হাত লাগাল তাদের সাথে।
রনি ক্লাস নাইনের ছাত্র।কাজ করতে করতে হঠাৎ তার নজরে পড়লো সরু দড়িতে বাঁধা কাগজের জাতীয় পতাকা গুলো হওয়ার ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যাচ্ছে একটা দুটো।কিন্তু তার বন্ধু বা স্কুলের শিক্ষক কেউই মাটি থেকে সে পতাকা তুলে আবার দড়িতে লাগাতে ইচ্ছুক নন। তারা অবলীলায় দেখে অথবা না দেখেও সেই পতাকাগুলো জুতো দিয়ে মাড়িয়ে চলে যাচ্ছেন। রনির একটু দুঃখ হলো সে তাড়াতাড়ি গিয়ে একটা পতাকা তুলতে পিছন থেকে স্যারের ডাক নোংরার মধ্যে যেওনা এখানে এসো।আরো কষ্ট পেলে সে তার দেশের পতাকা যার জন্য এত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন যার জন্য এত সংগ্রাম সেই জাতীয় পতাকার নোংরাতেই পড়ে থাক আর রাস্তাতেই সে পতাকা তোলা তার কর্তব্য। স্যার এর ডাক উপেক্ষা করে পতাকা গুলো তুলে সে যেন বেশ আনন্দ পেল। কিন্তু তার জামা প্যান্টের মাটি লেগে যাওয়ায় সে বকাও খেলো প্রচন্ড।
ইতিমধ্যে তার প্রিয় বন্ধু সায়ন এসে হাজির, সে তাড়াতাড়ি করে তার জামা প্যান্টের লাগামাটি হাত দিয়ে ঝেড়ে দিল। এমন সময় পেছন থেকে “সারে জাহা সে আচ্ছা” গান বেজে উঠল এবং তারা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হলো অনুষ্ঠান। সেও কান্ডারী হুশিয়ার কবিতাটি পাঠ করে শোনাল।তারপর নাচ-গান বক্তৃতার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। সাথে সাথে যে যার মতো নিজের টিফিন নিয়ে খেতে খেতে বাইরে চলে গেল। কিন্তু সে গেল না।
তার বন্ধু বলল আরে চল কি হলো? কি এত ভাবছিস? সে উত্তর দিল, দাঁড়া স্যার রা তো আছেন এখানে একটু গুছিয়ে যায় আমরা হাত লাগালে স্যারদের সুবিধা হবে। স্যার আরো খুশি হলেন।কাজ শেষে রনি, সায়ন আর স্যারেরা টিফিন নিয়ে স্কুল থেকে বের হলেন।গেটের বাইরে আসতে লক্ষ্য করলো চারিদিকে কেকের খালি প্যাকেট পড়ে আছে।তার কি মনে হল সে গিয়ে ডাস্টবিন চেক করল কিন্তু সে দেখল ডাস্টবিনের অর্ধেকও নোংরা ভর্তি হয়নি। স্যার কে জিজ্ঞাসা করল, এখানে যত্রতত্র এভাবে প্যাকেট ফেলা কেন? স্যার ট্রেন ধরার তারা একটা প্রশ্ন উপেক্ষা করে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর সে আর তার বন্ধু ও লক্ষ্য করলো যে অন্য একজন স্যার কেক খেয়ে প্যাকেটটার দলা করে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে গেল। রনি আর সায়ন তা দেখে অবাক, যে স্যার এতক্ষন স্বাধীনতা দিবসের উপলক্ষে দেশসেবার বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি এই কাজ করতে পারলেন? রনি সায়ন কে বলল, দেখ, কি করলেন স্যার এটা? সায়ন বলল, কি আর করা যাবে বল স্যার ই যদি এরকম করে….. তারপর তারা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পথে রওনা দিল। সায়ন চলে গেল অন্যদিকে তার বাড়ির রাস্তায়। রনি কিন্তু অন্য কোনদিন এত কথা ভাবে না কিন্তু আজও রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো । সে চিন্তিত তার দেশকে নিয়ে তার দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এমন সময় তার আরেকজন বন্ধুর সাথে দেখা। তার নাম রাজদীপ।
রনি বলল,আমি দেখলাম তুই টিফিন খাওয়ার পর সাথে সাথে বেরিয়ে আসলি স্কুল থেকে কিছু কাজ করতে পারতিস তো আমাদের সাথে? সে উত্তর দিল, ছাড়তো, আমিতো টিফিন খাওয়ার জন্য গিয়েছিলাম, ওই স্যারদের বক্তৃতা কে শোনে? বড্ড আঘাত লাগলো রনির মনে।সে একটু রেগে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, স্বাধীনতা দিবসের কোন মূল্য নেই তোর কাছে? সে উত্তর দিল, বাদ দে তো ওসব, আমি চলি পড়া আছে আবার। রনি ভাবতে লাগলো, মানুষ এতটা স্বার্থপর হতে পারে?সে বাড়ি গিয়ে তার বাবা মাকে জিজ্ঞাসা করল কিন্তু তারা কেউ একমত হলেন না রনির সাথে বরঞ্চ বকা দিলেন জামাপ্যান্ট নোংরা করার জন্য। হাতমুখ ধুয়ে এসে পড়তে বসল রনি। কিন্তু পড়ায় মন বসাতে পারল না। সে আরো চঞ্চল হয়ে উঠেছে, সে ভাবছে এতো আয়োজন এত খাবার দাবার এত অনুষ্ঠান কিসের জন্য? স্বাধীনতা দিবস উদযাপন না হলেই তো বেশি ভালো হতো কারণ এত খাবারের প্যাকেট ফেলে অকারণ দূষণ বাড়ানো। এটা কি সত্যি কারের স্বাধীনতা?এই সময় সুকান্ত ভট্টাচার্য ক্ষুদিরাম বেঁচে থাকলে কি করতেন? তারাও তো আমার মত বয়সেরই ছিলেন। এইসব বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল তার মাথার মধ্যে তখন সে তার রেডিওটা দেখতে পেল।
রনি আধুনিককালের হলেও তার রেডিও শোনার শখ ছিল খুব কিন্তু সে ভালো রেডিও চালাতে পারতো না, সে তার মনের অস্থিরতা কাটানোর জন্য রেডিও চালাল।রেডিওতে পনেরোই আগস্ট উপলক্ষে আয়োজিত সভায় নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বংশধর অনিতা বসু উপস্থিত ছিলেন।তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস এর জীবন কাহিনীর বর্ণনা করছিলেন।নেতাজি সুভাষ বোস এর জীবন কাহিনী রনি আগেও পড়েছে কিন্তু ছোট আকারে তাই এই বিস্তারিত জীবন কাহিনী শুনতে সে বেশ ইচ্ছুক ছিল। শুনতে শুনতে কোথাও যেন সে তার জীবনের মিল খুঁজে পাচ্ছিল সুভাষ বসুর সাথে বিশেষ করে তাঁর বাবা-মা এবং স্যারের বিরুদ্ধ আচরণ এবং তার বন্ধুর রাজদীপের কথা ইত্যাদি।তার ভেতর থেকে যেন একটা আওয়াজ জেগে আসলো, সে ভাবল সত্যিই তো নেতাজি তার পরিবার ত্যাগ করে জার্মানি রওনা দিয়েছিলেন শুধুমাত্র তার দেশের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে এবং প্রথমদিকে তার সমর্থক না থাকলেও পরবর্তীকালে সমগ্র ভারতবাসী তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।গল্প শেষের পর সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল হঠাৎ করে সে বেরিয়ে পড়ল সাইকেল নিয়ে , বাবা মাকে বলল যে মাঠে খেলতে যাচ্ছি। সে সায়ন র বাড়িতে গিয়ে তাকে ডাকল। সায়ন বেরিয়ে আসতে রনি বলল, বিন্দু বিন্দু জল থেকেই নদীর সৃষ্টি হয় রে, চল আমরা দুজনেই নতুন করে কিছু শুরু করি।রনির কথা শুনে সায়ন উৎসাহিত হয়ে গেল এবং তারা একসঙ্গে সাইকেল চালিয়ে স্কুলের গেটে পৌঁছাল। রনি ও সায়ন মিলে যতটা সম্ভব নোংরা পরিস্কার করল। তারা শপথ নিল যে,আজ থেকে যতটা সম্ভব দেশের কল্যাণকর কাজ তারা করবে এবং সবাইকে উৎসাহিত করবে।
More From Author
- আন্দামানের সেকাল-SANCHITA BISWAS-2nd-Bangla Article
- ইনডিপেনডেন্স ডে-SAMADRITA MONDAL-2nd-Bangla Story
- স্বাধীনতার মানে-Abhinandan Barua-1st-Bangla Story