আমার বাবা – Anjum Binti : 1st Place Winner

বাবা তো বাবাই হয় কিন্তু “বাবা” আগে “আমার”শব্দটা কেন জানো?
কারণ এই বাবাটা শুধুই আমারই।আমার বাবা সেই মানুষটা যে আমাকে ভালো মেয়ে নয় ভালো মানুষ হতে শিখিয়েছে।ছোটবেলাটা আমার মায়ের সাথেই কেটেছে কিন্তু বাস্তবতাটা বাবার হাতেই শিখা।
যখন আমার রেজাল্ট খারাপ হতো,বাসার সবাই বকতো শুধু বাবা বলতো”বিনু,জীবনটা তোর।তোর জীবনে তুই কি করবি এটা তোর ইচ্ছা। যা পাবি সেটা তোরই থাকবে আর যা করবি সেটার ফলও তুই পাবি।আমারা শুধু তোকে ভালো খারাপটা বলে দিতে পারবো।জীবনের রাস্তাটা তোকে একাই হাটতে হবে।”
হাস্যকর লাগতো এটাই আমাকে কতগুলো ছেলে প্রপোজ করসে সেটা আমার চেয়ে আমার বাবার মনে থাকতো বেশি!। একদিন সন্ধ্যায় বাবা আর আমি কলেজের মাঠে ফুচকা খাচ্ছিলাম। একটা ছেলেকে হঠাৎ চোখে পরতেই বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম”বাবা ওই ছেলেটা কে চিনা চিনা লাগতেছে না?”বাবা বলতেসে “ক্লাস 7/8 এ তোকে প্রপোজ করসিল না এডা?”আমি রীতিমতো অবাক।আমারই মনে নাই ওই ছেলের কথা!!!
খাওয়া নিয়ে সব সময় খুব বিরক্ত করি বলে বাবা খায়িয়ে দেয়। জানে মুখে তুলে দিলে না করবো না।
অনেক সময় পরতে বসে টেবিলেই ঘুমায়া পড়ি।কারো খবর না থাকলেও বাবা কোনো সময় রুমে লাইট ওফ করে গায়ে কাঁথা দিয়ে বই সরিয়ে বালিশ দিতে ভুলে না।
পিরিয়ডের ডেট আমার মনে না থাকলেও বাবার ঠিকি প্রতি মাসে পিরিয়ডের আগে প্যাড আনতে ভুলে না।আমার বলার আগেই!
রান্না করতে হবে বলে খাবো না জানে।তাই ঘুম হারাম গভীর রাতে উঠে ঠিকি রান্নাটা করে রাখে।
চুলের যত্ন নেই না বলে নিজে আমার চুলগুলো ঘুমাইলে পরে আচঁরিয়ে দেয়।
ঘুরতে ভালো লাগে বলে গাড়ি নিয়ে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে যায় আমাকে নিয়ে।সেদিন কোথায় যে যাই আমরা নিজেরাই জানি না!
সাজতে ভালো লাগে না বলে আমাকে কখনো জোর করে না সাজতে।কিন্তু কাচের চুড়িগুলো ঠিকি কিনতে মনে রাখে।কোনোদিন সাজলে কোথায় সাজের কমতি পরলো বাবাই সেটা খুজে বের করে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমালে মাথার কাছে চকলেটটা ঘুম থেকে উঠে এখনো পাই।অথচ এখন আমি কলেজ ও শেষ করে ফেলবো!
কেউ যখন আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় “সোহেল স্যারের মেয়ে” বাবা বলে”ও বিনতি!”
আমার পরিচয় জানতে চাইলে যখন মা বাবার কথা বলি, বাবাই আমাকে না করে বলতে।
বলে “তুই নিজের পরিচয় দিবি।তোর মা বাবার না। ভবিষ্যতে যেন বলতে না হয় সোহেল স্যারের মেয়ে তুই। সবাই যেন আমাকে বলে বিনতির বাবা সোহেল স্যার!”
রাতে ৮টার পরে বাসায় কখনো বাসায় আসলে বাসার সবাই কৈফিয়ত চায় আর বাবা বলে “ঘরে যেয়ে রেস্ট নে আগে।ঘেমে গেছিস!”
বাবা সব সময় বলে “নিজেকে এমনভাবে তৈরী কর যেন কারো উপর ভবিষ্যত নির্ভর করতে না হয়।কেউ তোকে কিছু বলার আগে যেন ১০বার ভেবে বলে।”
ছোটবেলা থেকে বাবা সবকিছুতেই আমাকে একা ছেড়ে দিতো।পারবো না একা তাও ছেড়ে দিতো বলতো”একা করে শিখ”খুব খারাপ লাগতো কিন্তু এখন বুঝি একা করতে দিতো বলেই হয়তো একা চলাটা শিখে গেছি।অফিস, কোর্ট, আইন,সামাজিকতা, নির্বাচন, ব্যাংক ছোটো খাটো কাজগুলো একাই করতে পারি।মাঝে মাঝে বাবার কাজ গুলো ও করে দিতে পারি।
বাবা বলে”তোর ভালো মেয়ে হওয়ায় দরকার নাই।ভালো মানুষ হ।একটা ছেলে, একটা স্বনির্ভর মানুষের সাথে যেন তোর কোনো ফারাক না থাকে।”
এমন আরো অনেক কথা আছে আমার বাবাকে নিয়ে।সবার বাবা এমন হয় না।
কিছু পুরুষ তো জন্ম দেওয়ার পরে দায়িত্বই নিতে চায় না।জন্মটাই অস্বীকার করে।কিছু পুরুষতো মাসে মাসে টাকা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে।ভাবে মা তো আসেই মেয়েরে তো দেখেই। কিছু বাবা দূর থেকে ভালবাসে প্রকাশ করে না।কোনো বাবার সাথে তাদের মেয়ের রোজ দেখাটাও হয় না।কথা বলা তো আরো দূরে!কিছু বাবা ইচ্ছে করেই মেয়ের থেকে দূরে থাকে।
তারাও বাবা আর আমার বাবাও বাবা
হয়তো ছোট ছোট দৃষ্টিভঙ্গির জন্যে আমার বাবা আজকে “আমার বাবা” শুধু “বাবা” নয়!।আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে বাবা কাকে বলে?
আমি কি বলবো জানো?
“বাবা হওয়াটা একজন পুরুষের sacrifice নয়। It’s a choice “
আমার বাবা মানুষ হিসেবে কেমন জানি না।জানতে চাই ও না। স্বামী হিসেবে কেমন তাও জানি না।ছেলে হিসেবে কেমন সেটাও অজানা।ভাই হিসেবে কেমন আমার ধারণা নেই কিন্তু বাবা হিসেবে আমার বাবা সব বাবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ এটা আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি।
আমি উড়তে ভালবাসি বলে বাসার সবাই যেখানে আমার ডানা দুটো কেটে দিতে চায় বাবা সেখানে তার ডানা গুলো আমাকে দিয়ে উড়তে বলে!!কি অদ্ভুত!
এতোকিছুর জন্যে বাবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করবো না।চেষ্টা করবো জীবনের রাস্তায় হাটতে হাটতে যখন বাবা ক্লান্ত হয়ে বসে যাবে তখন যেন বাবার পা হয়ে বাবার রাস্তাটা যেন আমি হেঁটে দিতে পারি!
Written By : Anjum Binti
Institution : Gurudayal Govt College, Kishoreganj
More From Author
- সন্ধ্যাতারা – Homira Anjum : 5th Place Winner
- নিছক একটি গল্প – Nishat Munira Annesha : 1st Place Winner
- শিকার – Ahmadullah Shaiyan : 5th Place Winner