ত্যাগ এবং বাবা – Chowdhury Ahmed Murtaza : 5th Place Winner

‘বাবা বা পিতা’ – খুব ছোট একটি শব্দ হলেও প্রচণ্ড আবেগ ও অনুভূতির তীব্র মিশ্রণ রয়েছে শব্দটিতে। প্রত্যেক সন্তান এর জীবনে বিরাট অংশ জুড়ে থাকে তার বাবা। বাবা কে বিশেষায়িত করার মত উপযুক্ত শব্দ হয়ত আজো পৃথিবীতে কোনো বিশেষজ্ঞদল আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় নি। সন্তানের মাথার ওপর আমৃত্যু বট বৃক্ষের মত ছায়া হয়ে থাকে সকল বাবাই। বাবারা কখনো হারতে জানে না। সন্তান ও পরিবার এর কল্যাণের জন্য তাদের জয় লাভ করতে হয় জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে। প্রত্যেক বাবার জীবন যুদ্ধের পেছনে থাকে ছোট কিংবা বড় গল্প। কিন্তু সুখ ও দুঃখের মিশ্রণে তৈরি হওয়া এসকল গল্পের কতটুকুই বা জানে সন্তান ও পরিবার? প্রত্যেক সন্তানই কি পারে তার বাবা নামক বট বৃক্ষের ত্যাগের মর্যাদা দিয়ে সঠিক পরিচর্যা করতে? হয়তোবা ‘হ্যাঁ’, হয়তোবা ‘না’।
বাবাদের জীবনের বিরাট অংশ পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে করতেই পার হয়ে যায়। দৈনন্দিন জীবনে বাবাদের এতই ব্যস্ততা থাকে যে, তারা প্রায়শই ভুলে যান যে তারাও মানুষ। তাদের সকাল টা হয় খুব সাদামাটাভাবে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় পরিধান করে চলে যান পরিবার এর মৌলিক চাহিদা পূরনে অর্থ উপার্জন করতে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা কিংবা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের জীবনযুদ্ধ। কাদের জন্য এই যুদ্ধ? সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের জন্য। চাকরি শেষেও তারা প্রায়শই ঘরে ফিরতে পারে না। পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে সারাদিনের ক্লান্তিকে সাথে করে তাকে পাড়ি দিতে হয় সবজি বা মাছের বাজারে কিংবা মুদি দোকানে। বাজার সেরে যখন তিনি ঘরে ফেরেন, তার সারাদিনের ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে যায় সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের মুখের হাসি দেখে। পরিবারের সুখ নিশ্চিত করতে গিয়ে সারাদিন বাবা নামক মানুষটা হয়ত ঠিকমত খেতেই ভুলে যায় যার ফলে তার দেহ ধীরে ধীরে হয়ে পড়ে শীর্ণকায়। সন্তানসহ পরিবারের যেকোনো সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সুস্থ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাবা নামক মানুষটা। অথচ এই মানুষটা দিনের পর দিন পরিশ্রম করতে করতে শরীরে কোনো ব্যামো বাঁধালেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। নিজের চিকিৎসা না করিয়ে সে অর্থ জমিয়ে রাখেন পরিবারের জন্য। বিভিন্ন উৎসবে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন পরিবারের মুখে হাসি ফোঁটাতে। পরিবারের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না বাবারা। কি ঝড় কি বৃষ্টি, শত প্রতিবন্ধকতা কে পেছনে ফেলে লড়ে যান জীবন যুদ্ধ। কত বৃষ্টি, কত ঝড়, কত বন্যা – হাজার দূর্যোগময় পরিস্থিতিতেও যখন পরিবারের সদস্যরা ঘরে, ঠিক তখন বাবারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোজগারে ব্যস্ত। কিন্তু জীবনের এত ত্যাগ এর পরেও সন্তান কিংবা পরিবারের কাছে সব বাবারা যথাযোগ্য সম্মান ও পরিচর্যা পায় না। যার কারণে সৃষ্টি ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামক জায়গাটির। কিন্তু এটাই কি বাবাদের প্রাপ্য? কখনই নয়।
শুধু বাবা দিবস নয়, প্রতিটি দিনের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের সকলের উচিত আমাদের বাবাদের খেয়াল রাখা, পরিচর্যা করা। আমাদের সকলের উচিত, বাবা নামক বট বৃক্ষের ত্যাগের মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে বাবাদের যোগ্য সম্মান দেয়া। শুধু বাবা দিবসেই নয়, প্রতিক্ষণে আমাদের চাওয়া হোক-“ভালো থাকুক পৃথিবী’র সকল বাবারা”।
Written By : Chowdhury Ahmed Murtaza
Institution : University of Chittagong
More From Author
- ধন্যবাদ, বাবা – Noman Ahmed : 2nd Place Winner
- একটি অশ্রুত কথোপকথন – Sinhaj Noor : 2nd Place Winner
- আমার কাছে বাবা মানে – Farzana Parvin Puthi : 1st Place Winner