পিতার মহীরুহ – Rifaat Ahsan Sadat : 3rd Place Winner

সন্তানদের কাছে বাবারা কখনো সাধারণ মানুষ নয়। একটা ছায়া, আশ্রয়স্থল। বাবার কথা উঠলে যদিও সবসময় তার শাসনের কথাই মনে পড়ে, তবুও বাবারা সন্তানের উপরে একটা ছায়ার মতোই হয়ে থাকে। সবাই একথা বলে যে, সন্তান মায়ের একটা অংশ। কিন্তু একে ছায়া দিয়ে, যত্নের সাথে বাড়িয়ে তোলেন যে বাবা, তার কথা ভুলে যায় অনেকেই।
বাবারা কিন্তু রাস্তায় অতি সাধারণ। পথচলতি আর দশটা মানুষের মতোই। পুরোনো শার্ট, মলিন জুতো আর সস্তা কিছু স্বাদ আহ্লাদ নিয়েই বাবাদের জীবন। বাবারা নোটিফিকেশনের আশায় বসে থাকেন না। তারা আশায় থাকেন সময়মত বাসটা ধরতে পারার। আড্ডায় ব্যয় করে নয়, সময়টাকে বাঁচাতে চায় পরিবারের সাথে কাটানোর আশায়।
বাবারা অসম্ভব মিথ্যাবাদী। “পরের ইদে কিনবো” এটা মনে হয় বাবাদের উচ্চারিত সবচেয়ে বেশিবার বলা মিথ্যা। না খেয়ে থেকেও “আজ মাছের তরকারিটা খুব ভালো ছিল” এমন সব অসহ্যকর মিথ্যা বলেন বাবারা। আর সবচেয়ে বেশি মিথ্যা বলেন যারা পরিবার থেকে দূরে, কাজের জন্যে অন্য জায়গায় থাকেন। “এবার ইদে তাড়াতাড়ি আসবো”, “সামনের সপ্তাহে ছুটি নিয়ে আসছি”- এই ইদ, এই সপ্তাহ খুব কমই আসে বাবাদের জীবনে। অথচ বলে প্রতিবারই।
কিন্তু বাবারা স্বপ্নবিলাসী হয়ে থাকেন। নাস্তায় পনের টাকার কলা-রুটি খেয়ে স্বপ্ন দেখেন বাবারা। ভাতের বদলে এক কাপ চা, এক প্যাকেট বিস্কুট খেয়ে একটা সস্তা সিগারেটের ধুঁয়া ফুঁকতে ফুঁকতে স্বপ্ন দেখেন বাবারা। “মাছের মাথায় স্বাদ নেই”- বলে ছেলের পাতে তুলে দিয়ে অর্থহীন হাসি দিয়ে স্বপ্ন দেখেন বাবারা। স্বপ্নটা নিজেকে নিয়ে নয়, আপন যত্নে গড়ে তোলা নিজের সন্তানকে ঘিরে।
বাবারা বোঝেন। পরিবারের নীরবতম ব্যক্তি হলেও সবচেয়ে বেশি বুঝেন তারাই। তরকারিটা দেখেই বুঝতে পারেন হেঁসেলের অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা ছেলের সন্ধ্যায় “একটু নিচ থেকে ঘুরে আসছি” শুনে বুঝতে পারেন বয়স হচ্ছে, ছেলে বড় হয়েছে। “মাসের আরো নয়টা দিন বাকি” – স্ত্রীর এই দীর্ঘশ্বাসে বাবা বুঝে যান, আরেকটু সামলে চলতে হবে।
এতকিছুর পরেও বাবারাই আমাদের প্রথম শিক্ষক। আমাদের সাদা চোখে পৃথিবীটা চিনিয়ে দেন তারা। আমাদের বুঝ হবার পর থেকেই বাবাকে আমরা পেয়েছি যিনি শাসন করেন, নিয়মে বেঁধে রাখেন। কিন্তু ফাঁকি পড়ে যায়, যে অসীম মমতার সাথে আমাদের আগলে রাখেন সেই গল্প।
“পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নেই”- হুমায়ূন আহমেদের এক অমর বাণী। প্রতিটি বাবাই তার সন্তানের কাছে এক অবিচল আস্থার নাম। বাবারা পাথর-পানির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। বাবারা কাঁদে না, নিয়ম নেই। বাবারা অজানা এক অভিমানের পাথর বুকে ধারণ করে রাখেন। কারণ তারা জানে তারা পরিবারের খুঁটির মতো, তার দুর্বল হলে চলবে না। সীমাহীন আবেগ তাদের গ্রাস করতে পারে না।
প্রতিটি বাবাই একজন কিংবদন্তী। একজন অভিযোগহীন মাঝি যে কখনো আবহাওয়া প্রতিকূল বলে নৌকা ফিরিয়ে দেয় না। একজন চরম স্বার্থপর ব্যক্তিত্ব, যিনি ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় কাউকে ভাগ নিতে দেন না। নিজের মনে লালন করা অনেক স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে, অবিরত ত্যাগ স্বীকার করে চলেন সন্তানকে একটু উন্নত জীবন দিতে পারার আশায়।
আমি প্রতিটি বাবার মুখে সারাজীবন এক অমলিন হাসি দেখতে চাই। যে অমলিন হাসি সন্তানদের আশা জোগাবে। পরিবারকে আস্থা দেবে। সুখী হোক পৃথিবীর সমস্ত বাবারা।
Written By : Rifaat Ahsan Sadat
Institution : Bangladesh University of Professionals
More From Author
- একটি অশ্রুত কথোপকথন – Sinhaj Noor : 2nd Place Winner
- ত্যাগ এবং বাবা – Chowdhury Ahmed Murtaza : 5th Place Winner
- আমার কাছে বাবা মানে – Farzana Parvin Puthi : 1st Place Winner