বাবা : অজস্র স্বপ্নের কারিগর-Md.Bakhtiar Mujahid Siam: 4th Place Winner

বাবা।এক অব্যক্ত অনুভূতির নাম।অপ্রকাশিত ভালোবাসার নাম।সচরাচর মায়ের প্রতি বাঁধভাঙা ভালোবাসার জোয়ার প্রকাশিত হলেও বাবার প্রতি তা কেমন যেন অস্পৃশ্য রয়ে যায়।আমার মতে,সেই অস্পৃশ্য জিনিসটাই বাবার প্রতি ভালোবাসার চিহ্ন, সংজ্ঞায়ন,পরিচায়ক কিংবা মনের আয়নায় চিত্রিত রূপ।আর এ অস্পষ্টতাই বাবার প্রতি ভালোবাসার দিকটাকে নির্দেশ করে।
বাবাকে নিয়ে লিখতে বসলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঘামে ভেজা শার্ট,অবসাদগ্রস্থ চেহারা,সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তায় মজে দিশেহারা কোন মুখমণ্ডলের দৃশ্য।কোটরের ভেতরে গভীর হয়ে ঢুকে পড়া সন্দিগ্ধ দুটো চোখে দিবানিশি লেগে থাকে পরিবার,সংসারের অগ্রগতি আর স্নেহের সন্তানদের মুখে দুনিয়াজোড়া উপচেপড়া হাসি ফোটানোর স্বপ্ন।
রং-বেরঙের এই পৃথিবীটাতে বহু অসৎ মানুষের বাস।তবে সবচেয়ে সুখকর বিষয় হলো এই বিচিত্র ধরার মাঝে একটাও খারাপ বাবা নেই।এমন কোন জনক খুঁজে পাওয়া যাবে না যার চোখ সন্তানের ব্যথায় নীরবে কাঁদে না।যার পা ছোটে না নিত্যদিনকার জীবনসংগ্রামে,শুধুমাত্র সন্তানের মুখে দু বেলা দু মুঠো ভাত তুলে দিতে।
বাবাকে অনুভব করা যায় প্রতিটা পদক্ষেপে।প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে।জীবনের প্রতি কদমে কদমে।যে বাবা হাঁটতে শেখায়।প্রথম হাঁটতে শেখার সময়টাতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে আবার মাটি থেকে তুলে হাত ধরে হাতে নতুন করে শেখায়।বলে ‘দেখো আব্বু,এভাবে হাঁটতে হয়’।প্রেরণা যুগিয়ে চলে জীবনের প্রতিটি প্রেক্ষাপটে।প্রতিটি যুগান্তকারী জীবন বদলে দেয়া সিদ্ধান্তে।মহামানবদের জীবন ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলেও সে চিত্র অবলোকন করা যায় খুব সহজেই।বেশিরভাগেরই জীবনের আমূল পটপরিবর্তনের আড়ালের কারিগর তার বাবা।
তা আব্রাহাম লিংকনের কাঠমিস্ত্রী বাবা হোক কিংবা জগতশ্রেষ্ঠ দার্শনিক জালালুদ্দিন রুমির জ্ঞানসম্রাট পিতা।’বাবা’ তাই অযাচিত আবদার মেটানোর নাম।জীবনের রূঢ় বাস্তবতার সাথে লড়াই করে কিভাবে বাঁচতে হয়, নিদারুণ কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এই কঠিন সত্যগুলো শেখানোর প্রথম শিক্ষক জন্মদাতা পিতা।
তাই বাবা আমার কাছে অযুত শিহরণের নাম।মনে পড়ে,সেসময় বাবার ছোট্ট একটা লাইব্রেরি ছিলো।সেই ছোট্ট আমি যখন গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে শিখছি তখন বাবার লাইব্রেরি ব্যবসার শুরু।সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে বাসায় ফেরার সময় মিষ্টির দোকান থেকে গরম গরম মিষ্টি আর সাথে গরম পরোটা নিয়ে হাজির হতেন বাসায়।আসা মাত্রই বিছানায় বসিয়ে পরম মমতায় পরোটাগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে রসগোল্লার রসে চুবিয়ে চুবিয়ে পুরে দিতেন মুখে।কারণ তা ছাড়া যে কিছুই খেতে পারতামনা আমি।ভাত-মাংস ছিলো আমার কাছে তখন সাক্ষাৎ যমদূত।
সকাল বেলা সুবহে সাদিকের সময় ফজর পড়ে যখন বাবা বাসায় ফিরতেন,কান্না জুড়ে দিতাম তখন বাইরে নিয়ে ঘোরাঘুরি করার জন্য।তখন বাবা চোখে জমে থাকা রাজ্যের সব ঘুম ফেলে ছুট দিতেন এই আমাকে নিয়ে।ঘুরিয়ে দেখাতেন মাঠ-ঘাট-পাখিসব।আমি তখন নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলতাম তাকে ‘আব্বু,এতা কি,ওতা কি?’।অগণিত প্রশ্নের বাণ সহ্য করে,সেগুলোর উত্তর দিয়েই তবে ক্ষান্ত হতেন।বাদ পড়তোনা একটা প্রশ্নও।সেই সময়গুলোর কারণেই বোধহয় এখন দু’কলম লিখতে পারছি।জানতে পারছি।শিখতে পারছি অজস্র তত্ত্ব,তথ্য,ইতিহাস।
কারণ গবেষণায় এসেছে সেই অগণিত প্রশ্ন শিশুমস্তিষ্ককে শাণিত করে।তার বদৌলতেই হয়তো প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করে চলেছি জ্ঞানসাম্রাজ্যের অপরিচিত সব দরজা।এর জন্য অন্তরের উৎসারিত সমস্ত কৃতজ্ঞতার একমাত্র প্রেরণস্থল ‘বাবা’।
বাবার প্রতি জমানো ভালোবাসাগুলোকে তাই শব্দের সীমাবদ্ধতায় বাঁধা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।কারণ বাবাকে নিয়ে লিখতে গেলে হয়তো অনন্ত মহাসমুদ্র সমান কালি-কলম ফুরিয়ে যাবে।তবুও তার স্তুতিগাঁথা রচনা শেষ হবে না।সবার প্রতি ছোট্ট অনুরো, শেষবয়সে বুড়ো শিশুর মত বাবাটাকে ফেলে চলে যাবেন না।মায়া মমতা দিয়ে মুখে তুলে দেবেন গরম পরটা-মিষ্টি।হাতখানা বুলিয়ে দেবেন তার অশীতিপর মুখমণ্ডলটাতে।বাবার পড়ে যাওয়া দাঁতের উপচেপড়া হাসি যেন তখন শিহরণ খেলে দিয়ে যায় আপনার অন্তরটাতে।হৃদয়ে যেন ভাসিয়ে দিয়ে যায় স্বর্গীয় সুখের উন্মাতাল ভেলা।
বাবা,তোমাকে বড্ড ভালোবাসি।
Written By : Md.Bakhtiar Mujahid Siam
Institution : Dhaka Dental College
More From Author
- অবন্তীর বাবা দিবস – Humayara Tabassum : 4th Place Winner
- শিকার – Ahmadullah Shaiyan : 5th Place Winner
- সন্ধ্যাতারা – Homira Anjum : 5th Place Winner