শিকার – Ahmadullah Shaiyan : 5th Place Winner

১
ঈদের আগে বরাবরে মতোই এইবারও মার্কেটে ভীড় বেশি ।মার্কেট উপচে পড়ছে মানুষে ।সবাই সবার মতো ব্যস্ত।এরচেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে নাহ।সুরুজ আলির এই দীর্ঘ ৩৫বছরের জীবনের অভীজ্ঞতা তাকে ভুল পথে নিয়ে যাবে না-এই বিশ্বাস তার আছে।শিকার করতে বের হয়েছে সে।শিকার না করে সে ফিরবে না।ফিরতে পারবে না।
শিকার করা কিন্তু সহজ কোনো কাজ না। এই কথা তার থেকে ভালো কে বা জানে? আজকের শিকারের কথাই ধরা যাক।গত ১০ দিন থেকে সে শিকারের খোঁজে আছে।কিন্তু সময় আর সু্যোগ একসাথে ব্যাটে বলে না মিললে যে কোনো খেলাই হয় না।আজ খেলার দিন।শিকারের জন্য প্রথমেই ঠিক করতে হয় শিকারির ঘাঁটি।ঘাঁটিতে চুপটি মেরে বসে থাকো আর সঠিক সময়ের অপেক্ষা করো। শিকার নিজে আসবে তোমার কাছে।শুধু সঠিক সময় দেখে থাবা বসাও। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে সে শকুন অপেক্ষায় আছে তার শিকারের ।
মানুষজনের ভীড় ঠেলে সে এগিয়ে যাচ্ছে তার লক্ষ্যের দিকে।“ময়না বস্ত্র বিতান”।এটাই তার শিকারের ঘাঁটি।সবসময়ের মতো মানুষ দিয়ে পরিপূর্ণ।সুরুজ মিয়ার চেহারা অন্য যেকোনো মধ্যবিত্তের মতোই।চেহারায় কোনো বিশেষ চাতুরতা লক্ষ্য করা যায় নাহ।যদি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা হয় তাহলে হয়তো এটা খেয়াল হবে যে তার কান দু’টো অন্যদের চেয়ে একটু বড় ।এই যা।
সবাই দাঁড়িয়ে বসে দরাদরি করছে।মাঝে মাঝে এই সাধারণ মানুষগুলোর দিকে সে তাকিয়ে থাকে।খুব অন্য রকম লাগে তখন তার।এই সাধারণ মানুষগুলো হঠাৎ করে কেমন হিংস্র হয়ে ওঠে তা সে জানে।তাদের সুপ্ত রক্ত পিপাসা উজ্জ্বল দিনের আলোয় রঙ খেলে।খেলা শেষ হলে সেখানে কোনো অন্যায় থাকে না, অপরাধবোধ কাজ করে না।প্রিয়জনের মৃত্যুতে যেখানে শত আহাজারি, অপরিচিতজনের মৃত্যুতে সেখানে শুধুই লোক দেখানো ন্যাকামি। অনেক সময় হাতের রক্ত কলের পানিতে ধুয়ে তারা রাতে সুখের নিদ্রা যায়।শুধু ঘুমাতে পারে না সুরুজের মতো মানুষরা।
এক ভদ্রমহিলা তার দুধের শিশু নিয়ে দোকানদারের সাথে বিকট সুরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে।
-৫০০ টাকা দিবো।
-আপা,৯০০ টাকা আমার নিজের কেনা।
-৫৫০ টাকা দিবো।দিলে দেন, না দিলে চলে গেলাম।
হয়তো মায়ের দাবি জোরদার করার জন্যে কোলের শিশুটিও কান্না জুড়ে দিলো । শিশুটির কান্না কয়েকজনকে বিরক্ত করলো, কয়েকজনকে ক্ষণিকের আনন্দ দিল।ঠিক এই সময় শিকার তার চোখে ধরা দিলো।প্রহর গুণার পালা শেষ। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো শিকারের দিকে।
২
সুরুজ আলি তার বাসার কলিংবেল চাপলো।দরজা খুলে দিলো এক ৭ বছর বয়সী মেয়ে।
-আব্বা, তুমি আইসো? আমার ঈদের জামা আনছো?
-এই যে মা, নাও-
-আম্মা দেখো আব্বা আমার জন্যে নতুন জামা নিয়া আসছে!
ভিতর থেকে একজন মহিলা বের হয়ে আসলো।
-তোমার কি হইছে? তোমার মাথার পিছনে রক্ত ক্যান? ঘাড়ও ফুলে গেছে।
ছোট মেয়েটি উত্তেজনায় এতোক্ষণ খেয়াল করে নি।এখন তার পিতার রক্ত দেখে তার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল।সুরুজ আলি এটা দেখেই মেয়েকে কোলে নিয়ে বলে
-আরে মা!কাঁন্দে না।পিছলা পইড়া গেছিলাম ।কালকে তো ঈদ।চলো, তোমারে ঈদের গল্প শুনাই—
Written By : Ahmadullah Shaiyan
Institution : Mirzapur Cadet College
More From Author
- বাবারা কাঁদে না – Rahimul Islam Rihad : 2nd Place Winner
- সন্ধ্যাতারা – Homira Anjum : 5th Place Winner
- ধন্যবাদ, বাবা – Noman Ahmed : 2nd Place Winner