ঋণশোধ

১.
অনেকদিন পর রাসেদের সাথে ফোনে কথা বলতেছিলো কাউসার। লকডাউনে ফ্রী সময়ে পুরানো বন্ধু বান্ধব অনেকেই ফোন দেয়। কথায় কথায় আহাদের কথা তুললো রাসেদ।
:তোর আহাদকে মনে আছে কাউসার?
:কোন আহাদ? স্কুলে দুইজন ছিলো তো।
:আরে বাইট্টা আহাদ। তোরে যে হারাদিন পঁচাইতো।
:হো আছে। কেনো ওর কি কিছু হইসে?
:না। এমনে ভালো আছে। তবে বেচারা করোনায় বিপদে পরসে।
:কেন? কি হইলো হঠাৎ?
:ওতো থাই ফুডে চাকরি করতো। কোম্পানি লস খাইলো। তাই চাকরি টা চলে গেলো।
:আহারে। বেসরকারি সবার একই অবস্থা।
: আমাকে ফোন দিসিলো বুঝলি। বাড়িভাড়া সব মিলিয়ে ৪০ ৪৫ হাজার টাকা বাকি পরে গেছে। যদি হাজার ২০ ধার দিতে পারতাম।
:তা দিলি তুই?
:না। কেমনে দেই। নিজের অবস্থাই তো খারাপ। আমি অবশ্য ফরিদের কাছে চাইতে বলেছিলাম।
:হু, ফরিদের তো অবস্থা ভালো। শুনলাম রামপুরায় বাড়ি করতেসে।
:কিন্তু ফরিদ নাকি দেখি বলে আর ৩ দিন ফোন ধরে নাই।
: হয়তো দিতে পারতো না।
: আমি তোরে বলতাম। কিন্তু তোর নিজের ফার্নিচারের ব্যবসাই তো লসে আছে।
:তিন মাস দোকান বন্ধ। তার উপরে ভাড়া আর কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে।
:আচ্ছা রাখিরে।
এই বলে ফোন রেখে দিলো রাসেদ।
২.
চেয়ারে হেলান দিলো কাউসার। পুরানো অনেক কথায় মনে পড়লো। স্কুল জীবনে আহাদ কোনো দিন পাত্তাই দেয়নি ওকে। দেওয়ার মতো না। ও জানে আহাদ ওর কাছে ধার চাইবে না। চাবে যে ওর নাম্বার ও হয়তো নেই।
সাত বছর আগে রামপুরার এক চার দোকানে দেখা হয়েছিলো। তখন আহাদ চাকরি করে।বলেছিলো কিরে ব্যডা খালি কি ঘুরাঘুরি করস নাকি কামও কিছু করস। কার্ড দিয়ে বলেছিলো মালিবাগ অফিস। আসলে চা টা খেয়ে যাইস। আর এমনে না ঘুড়ে কিছু একটা কর।
নাম্বার টা সেভ করে রেখেছিলো কাউসার। চাকরি করে কখনো লাগলে হাজার পাঁচেক টাকা ধার পাওয়া যাবে হয়তো।
সাত পাঁচ ভেবে ফোন দিলো ঐ নাম্বারে। কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো আহাদ। রং নাম্বার বলে রেখে দিলো।
তারপর নগদে ৫০০০০ হাজার টাকা পাঠালো নাম্বারে।
৩.
নিজের ব্যবসা ভালো না এটা সত্যি। আহাদ কোনো দিন ওর ভালো বন্ধু ছিলো না এটাও সত্যি। কিন্তু টেনে স্কুল পিকনিকে ওর নাম না দেখে বলেছিলো আরে ব্যডা তুই নাম দে। ৫০০ টেকা আমি তরে দিয়া দিমুনে। ফেরত দেওউন লাগবো না।
অনেকদিন পুরানো ঋণশোধ করতে পেরে কাউসার শান্তিতে ঘুমাতে গেলো।
ঐদিকে রাত ১১টায় ফোনে ৫০ হাজার টাকা পেয়ে আহাদ ৭ টা ফোন করলো। কেউ বললো না টাকা পাঠিয়েছে।
More From Author
- None Found