ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি

আমি নাবিল।অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি।এ পৃথীবিতে আপন বলতে আমার তেমন কেউ নেই।মা বাবা অনেক আগেই পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।দূর সম্পর্কের এক চাচা আছেন।তিনি থাকেন গ্রামে।
আমি গ্রামে যাইনা অনেক বছর হল।আসলে যাওয়ার ইচ্ছাও করে না।যেখানে আমার কেউ নেই, সেখানে গিয়েও বা কি করব।এখানেই কিছু টিউশনি করে নিজের পড়াশুনার খরচ চালাই।
আজ ঈদের দিন।ঘুম থেকে একটু তাড়াতাড়িই উঠলাম।একটু পর গোসল করে নামাজ পড়তে যাব।এরপর একটু ঘোরাফেরা।একটু আনন্দ।
ঘোরাফেরার কথা মাথায় আসতেই মনে পড়ল, আমার বন্ধুরা বলেছিল আজ একসাথে সবাই বের হবে।সবাই একত্রে ঘুরবে।
তাই গোসল করে মসজিদে গেলাম ঈদের নামাজ আদায় করতে।
নামাজ পড়ে বাসায় আসছি।এমন সময় চোখে পড়ল কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়েকে।ওরা সবাই একত্রে খেলছিল।উপরে সাইনবোর্ডে তাকিয়ে দেখলাম,
এতিমখানা শব্দটা পড়েই মনটা কেমন করে উঠল।ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর দিকে আবার তাকালাম।এরাই সবাই এতিম,আমারই মত।পৃথীবিতে আপন বলতে কেউ নেই ওদের।
হঠাৎ একটা কথা মনে আসল।বন্ধুদের সাথে তো প্রতিদিনই চলি।প্রতিদিনই মজা করা হয়।আজ না হয় এই এতিম ভাইবোনদের সাথে ঈদের আনন্দটা ভাগাভাগি করে নিব।
যা ভাবা সেই কাজ, বন্ধুদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম।আজ আমি একটু ব্যাস্ত থাকব।প্রথমে ওরা একটু ঝামেলা করলেও,বুঝিয়ে বলায় ওরা ও মেনে নিল।
এরপর সেই এতিম খানায় ঢুকলাম।গিয়ে ওখানকার কেয়ারটেকারের সাথে কথা বললাম।ওনাকে সব বলার পর উনি খুব খুশি হলেন।সবাই ঈদ আনন্দে বুকে বুক লাগালাম।সেমাই খেলাম।সেমাই খাওয়ার সময় দেখলাম ওরা একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে।এই দৃশ্য দেখে আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।এদের এই পৃথীবিতে আপন কেউ নেই।কিন্তু ওরা এখানে একে অপরকে আপন করে নিয়েছে।যেন সবাই সবার আপনজন।
সারাদিন ওদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির করে আবার বাসায় রওনা দিলাম।
আজ আমি অনেক খুশি।কারন, আজ আমি আমার মত কিছু ছেলেমেয়েদের সাথে ঈদ করতে পারলাম।যারা এতিম হয়েও,যেন এতিম নয়।যেন একটা পরিবার।এই নিষ্ঠুর পৃথীবিতে আপনজনরাই দূরে ঠেলে দেয়।কিন্তু যারা দূরের কেউ,তারাই কাছে টেনে নেয়।এজন্যই হয়ত আমার মনে হল,
“আপনজনা নাহি চায়,
নাহি টানে কাছে
দূরেরই মানুষ তাই
খুব ভালোবাসে”।
More From Author
- None Found