রহিমের স্বপ্ন

রহিম, মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তাকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। রহিমও এক এক করে সব স্বপ্ন পূরণ করে চলেছে। ৫ম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে সে। পরিবারের সবাই খুশি তার এমন কৃতিত্বে। এলাকার মিষ্টির দোকানগুলোতে জমজমাট ব্যবসা। বাসায় বাসায় মিষ্টি চলে যাচ্ছে। অভিনন্দনের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে রহিম। চারিদিকে এত প্রশংসা যে এতগুলো প্রশংসা নিয়ে কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু সে কি খুশি, এটা নিয়ে কারোর কোনো মাথাব্যাথা নেই। রহিমের কাছেও এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। সে তাঁর মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছে. এটাই যথেষ্ট।
একটা স্বপ্ন পূরণ হল, কিন্তু মা-বাবার তো অনেক স্বপ্ন। তাই সে পরবর্তী স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে মাঠে নেমে পড়ল — জেএসসিতে জিপিএ পাঁচ পাওয়া। ইতিমধ্যে রসায়ন, গণিত, বাংলা ও ইংরেজীর জন্য গৃহশিক্ষক ঠিক করা শেষ। এদিকে সব বিষয়ের গাইড বইও কেনা প্রায় শেষের পথে। এবার শুধু যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বাকি। একদিন রহিম স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখতে পেল তার ঘরে একটি হারমোনিয়াম রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন, জেএসসিতে জিপিএ পাঁচ পাওয়ার জন্য কী হারমোনিয়াম লাগবে? বাবা এসে তার ঘরে হারমোনিয়াম রাখার কারণ ব্যাখা করল। রহিমকে গান শিখতে হবে। তাঁর খুব ইচ্ছা ছিল গান শিখবে, মস্ত বড় গায়ক হবে। কিন্তু রহিমের দাদার ইচ্ছা ছিল তাঁর ছেলে প্রকৌশলী হবে। তাই তিনি আর গায়ক হতে পারলেন না। তাই রহিম গায়ক হয়ে তাঁর এই ইচ্ছা পূরণ করবে। যথারীতি গানের ওস্তাদ এসে হাজির। একদিকে জিপিএ পাঁচ পাওয়ার জন্য পড়াশোনা আর অন্যদিকে গায়ক হওয়ার জন্য প্রতিদিন ভোরবেলায় ওঠে রেওয়াজ, দুটোই সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। ছেলে গান গাচ্ছে আর বাবা মোবাইলে ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। চারিদিকে লাইক, কমেন্টের বন্যা। ওহ! জীবন কত সুন্দর, ছেলে তাঁর অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ করছে।
জেএসসির ফলাফল প্রকাশিত হল। রহিম গোল্ডেন জিপিএ পাঁচ পেল। আবার সেই মিষ্টি, আবার সেই প্রশংসা। রহিমের ছেঁড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। কিন্তু কি আর করা, এই আনন্দের দিনে তো মন খারাপ করে বসে থাকা যায় না। তাই মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে সেও সবার সাথে আনন্দে শামিল হল।
এখন মিশন এসএসসি পরীক্ষা। যথারীতি প্রস্তুতি শুরু হল। সবকিছু ভালোই চলছে কিন্তু গান শেখার প্রতি তার আগ্রহ ক্রমাগত কমতে লাগল, যেন ঘূণপোকা বাসা বাঁধছে। ভোরবেলায় ওঠে আগের মত রেওয়াজ করে না। একদিন তো বলেই দিল, সে আর গান শিখবে না।
একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল রহিমের পরিবারে। বাবার সাথে রহিমের সম্পর্ক খারাপ হতে লাগল। যেখানে প্রতিদিন ফেসবুকে রহিমকে নিয়ে একটা করে স্ট্যাটাস থাকত তাঁর বাবার, আজকাল সেখানে রহিমের একটা ছবিও শেয়ার হয় না। এক ঝটকায় সবাই যেন পর হয়ে গেল। এত প্রশংসা, এত মিষ্টি সব যেন ইতিহাসের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল।
যাইহোক, জীবন তো আর থেমে থাকে না। এসএসসি পরীক্ষার পর রহিম কলেজে ভর্তি হল। আর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল, তা আর বলার দরকার নেই, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল। এরমধ্যে রহিম নতুন করে সবকিছু সাজাতে লাগল। নতুন কলেজ, নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু, রহিম অনেক খুশি। কিন্তু জীবন তো পুষ্পশয্যা নয়, তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ এসে হাজির। কলেজ থেকে পাস করার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতে হবে। তা না হলে জীবন শেষ। রহিমও বাধ্য ছেলের মত পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে লাগল।
কিছুদিন পর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হল। না ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আর হল না, রহিম জিপিএ পাঁচ পেল না। তখন তার গান ছাড়ার সিদ্ধান্তে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছিল, এখন তো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস সব একসাথে আসল। পুরোপুরি বিপর্যস্ত অবস্থা। বুয়েট মিস হয়ে গেল, এখন শেষ ভরসা ঢাকা মেডিকেল বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জরুরি মিটিং ডাকল রহিমের বাবা। পরিবারের সকল সদস্য হাজির। মিটিং এর বিষয়-রহিম কোথায় ভর্তি হবে? কারণ সে ঢাকা মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুটোতেই চান্স পেয়েছে। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবে সে কোন জায়গায় ভর্তি হবে। কিন্তু যে ভর্তি হবে অথাৎ রহিম অনুপস্থিত। এ যেন ‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই’ অবস্থা। কিছুক্ষণ পর রহিম আসল। তার আগে একটা ছোটখাটো নির্বাচন হয়ে গেল এবং ভোটে ঢাকা মেডিকেল জয় লাভ করল। রহিমকে ডাক্তারি পড়তে হবে।
বাবা এসে জড়িয়ে ধরল রহিমকে, গায়ক হতে পারল না তো কি হয়েছে, ছেলে তাঁর আরেকটা স্বপ্ন পূরণ করবে-মস্ত বড় ডাক্তার হবে সে। কিন্তু সে কি ডাক্তার হতে চাই? তার স্বপ্নের কথা কেউ জানতে চেয়েছে? তার স্বপ্ন কে পূরণ করবে?
রহিম আশায় বুক বাঁধল, একদিন তার নিজের সন্তান তার স্বপ্ন পূরণ করবে।
More From Author
- None Found
Desire to achieve goals in life. Be it small or big, having goals will always make life interesting. Being a better person than who I am today. And How to be a better person: Being happy and spreading love <3 🙂 Life is always interesting, Living in the present with the anticipation of future mixed with few lessons from the past.